মুভি রিভিউ Shaun the Sheep Movie (2015)

Posted by Unknown on Saturday, June 27, 2015 with No comments




আমি এনিমেটেড সিনেমা দেখতে খুব পছন্দ করি। র‍্যাঙ্গো, ফ্রোজেন, রেক ইট রাল্‌ফ বিগ হিরো সিক্স এই ধরনের মুভিগুলোতো এনিমেটেডেই সম্ভব। এমন মুভিগুলো এনিমেটেডে যেমন আবেদন তৈরি করতে পারে বাস্তব চরিত্র দিয়ে করালে তেমন আবেদন আনতে পারবে না এটা স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়। এখন পর্যন্ত ২০১৫ সালের সবটাই আমার ব্যস্ততার মাঝে গিয়েছে। মুভি দুনিয়ার খোঁজ খবর তেমন নিতে পারিনি। ব্যস্ত থাকলেও অল্প হলেও সিনেমা দেখা হয়। একদিন সময় করে ভাল রিপের একটা সিনেমা নামিয়ে দেখা শুরু করে দিলাম। মুভির নাম Shaun the Sheep-শন নামের ভেড়া।
অসাধারণ একটি এনিমেটেড সিনেমা। মাথায় আইডিয়া কিলবিল করে এমন একটা জিনিয়াস বাচ্চা ভেড়া তার পরিবার সহ থাকে এক মালিকের অধীনে। মালিক আবার সিরিয়াস রুটিন অনুসারী মানুষ! সবকিছু টাইম টু টাইম, সবকিছু টিপটাপ। একদিন জিনিয়াস ভেড়াটির মনে চাইল মানুষের মতো সপ্তাহের একটা দিন মালিকের কড়াকড়ির বাইরে ছুটিতে কাটাবে। এর জন্য মালিককে ধোকা দিতে হবে। একটা উপায় আছে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া। এখানে অনুসিদ্ধান্ত হল ভেড়া গুনতে থাকলে মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। অথবা মানুষ ঘুমানোর সময় কী করে? এক-দুই-তিন-চার করে ভেড়া গুনতে থাকে, এক সময় ঘুম চলে আসে। এটা নিউরোবায়োলজির একটি টার্ম, ঘুম বিষয়ক বিজ্ঞান। এমন নামে চমৎকার কিছু বিজ্ঞানের বইও আছে। এমনই একটা বই দেখেছিলাম এক সময়। নামটাও এমন Counting Sheep: The Science and Pleasures of Sleep and Dreams




এই ব্যাপারটা সিনেমাতে একটু অন্যরকমভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা ছেলেমানুষি, কিন্তু ছোটদের বেলায় কিংবা এনিমেটেড মুভির বেলায় এটা মোটেও তেমন কিছু নয়, বরং মজা আরও বাড়িয়ে দেয়। অল্প ভেড়া, বৃত্তাকারে একই ভেড়া কৌশলে বারবার ফিরে আসে কিন্তু মালিক দেখে অনেক ভেড়া, গুণে শেষ করা যায় না। গুনতে গুনতে ক্লান্ত হয়ে যায়, এক সময় ঘুমে ঢলে পড়ে। এই ছোট একটা ব্যাপারে এতগুলো কথা বললাম কারণ খেয়াল করলে দেখা যাবে সিনেমার মূল অংশে প্রবেশ করতে ভেড়াপালকের অনুপস্থিতির দরকার ছিল আর তা শুরু হয় এই প্রক্রিয়াটার মাধ্যমে। আর সিনেমার যে মোরাল তাও আসে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। মানে এভাবে ঘুম পাড়ানো হয় দুই বার। একবার মালিকের কাছ থেকে দূরে যেতে আরেকবার মালিকের কাছে আসতে।
যাহোক, জিনিয়াস ভেড়ার যেমন পরিকল্পনা ছিল তেমনভাবে সব হয়নি। গড়বড় হয়ে যায় আর এখান থেকেই সিনেমার মূল মোরাল শুরু। মালিক তাদের কাছ থেকে দূরে চলে যায়, দেখা দেয় আরেক বিপর্যয়। কে খাওয়াবে তাদের? কে পরিষ্কার করবে? কে হিংস্র প্রাণী থেকে তাদের রক্ষা করবে? জীবন এখন বিপর্যয়ের মাঝে। জরুরী ভিত্তিতে মালিককে দরকার। যেকোনো মূল্যে মালিককে ফিরিয়ে আনতে হবে। শেষমেশ কী আর করা শুরু হল মালিকের জন্য যাত্রা, অনেক ঘটনা ঘটে তাতে।

সব ঘটনা ঠিকঠাক মতো পরিকল্পনামাফিক হয়না। ভেড়ার দল অনেক হ্যাপার পরে যখন মালিকের কাছে গেল তখন এমন কিছু আবিষ্কার করল যা ছিল একদমই অপ্রত্যাশিত। হাল ছেড়ে দেয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু ঐ যে নায়ক জিনিয়াস ছেলে ভেড়াটা আছে তার কী আর হাল ছেঁড়ে দেয়া চলে? সেই কৌশল, চেষ্টা। ওরা কী পারে, যা তারা করতে চেয়েছিল?
এই নামে অনেক আগে থেকেই একটা কার্টুন সিরিজ টিভিতে প্রচারিত হয়ে আসছে। আঁকারে ছোট, হাঁসি ধর্মী এই সিরিজটি অনেক ছেলেমেয়েদেরই পছন্দের ছিল। যেমন আমার কাজিন মাহিও ছোটবেলায় এই কার্টুন দেখে বড় হয়েছে। আমিও নেট থেকে নামিয়ে কয়েকটা পর্ব দেখেছিলাম, ভালই লেগেছে। তবে সিনেমাটার মান অনেক অনেক গুণ বেশি। এনিমেশনের মান অনেক অনেক উন্নত, অনেক পরিষ্কার।
সিনেমার আরেকটা দারুণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর মাঝে কথা আছে কিন্তু ভাষা নেই। মানে ওদের ভাষায় ওরা কথা বলে শব্দ হয়, চিৎকার হয়, চেচামেচি হয় কিন্তু কোনো ভাষার দরকার পড়ে না। সিনেমার মাঝে এটা একটা সীমাবদ্ধতা হবার কথা ছিল কিন্তু এটা সিনেমার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। আর নির্মাণ এত দারুণ ছিল যে এখানে ভাষার দরকার নেই। যারা সাবটাইটেল দিয়ে সিনেমা দেখি (আমি ইংরেজি অর্ধেক সিনেমাই সাবটাইটেল দিয়ে দেখি) তাদের বেলায় এটা খুবই কাজের জিনিস। ভাব বুঝতে কষ্ট করে সাবটাইটেল পড়তে হয়না।
সিনেমাটা খুব মজার ও জায়গায় জায়গায় কমেডিতে ভরপুর। সিনেমাটা কয়েকজনকে সাজেস্ট করেছিলাম, তারা বয়সে বড়, তাদের ভাষ্য ছিল- ভেড়ার মুভি দেইখা কী করাম? :/ সিনেমাটা যে ফাটিয়ে ফেলেছে তা বুঝা যায় ফেসবুকের স্টিকার কমেন্ট দেখলে। ফেসবুক তাদের স্টিকার স্টোরে জনপ্রিয় ও অসাধারণ কিছু সিনেমার স্টিকার যোগ করে থাকে। এই সিনেমার স্টিকার দেখার পরে নিশ্চিত হলাম আমার অনুমান সত্য ছিল।