Mad-Max মুভি রিভিউ

Posted by Unknown on Friday, June 26, 2015 with No comments
সিনেমার নাম - Mad Max: Fury Road (2015)
মানবজীবন তথা একজন মানুষের "সিনেমাজীবন" দুইটা কারণে ব্যর্থ হয়-
১- কিছু নির্দিষ্ট মাস্টারপিস সিনেমা না দেখলে।
২- কিছু নির্দিষ্ট মাস্টারপিস সিনেমা "হলে" গিয়ে না দেখলে।
ম্যাড ম্যাক্স এর ক্ষেত্রে এক নাম্বার পয়েন্টটা যতটা যায়, তাঁর চেয়ে একটু বেশী যায় দুই নাম্বার পয়েন্টটা।
ভবিষ্যৎ পৃথিবী। পারমাণবিক যুদ্ধ আর দুর্যোগে প্রকৃতি প্রায় বিলীন হওয়ার পথে।মানুষ আর পশুপাখির মিউটেশন হয়ে তাদের মাঝেও বেশ অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা শুরু হয়েছে। যেদিকে তাকানো যায়, সেদিকেই ধু ধু মরুভূমি, গাছের নামগন্ধ নাই। এই সময়ে পৃথিবীতে অঞ্চলভিত্তিক কিছু "লর্ড" টাইপ লোক আছেন যারা সেই এলাকার পানি ও জ্বালানী নিয়ন্ত্রণ করেন কারণ এই পানীয় আর জ্বালানীও তখন অনেক দুষ্প্রাপ্য। এরকম একজন লর্ড হলেন “ইম্মরটান জো”। নিজের অন্ধ অনুসারীদের নিয়ে সে একটা দল গঠন করেছে যাদের মাঝে ছোট অনেক বালক ও শিশু আছে যাদেরকে ছোটবেলা থেকে সে বুঝিয়েছে যে তাঁর জন্য নিজের প্রাণ ত্যাগ করলে মৃত্যুর পরে তারা স্বর্গসুখ লাভ করবে। এই ছোট ছেলেরা যখন যুবকে পরিণত হয় তখন তাদেরকে বলে "ওয়ারবয়"। এদের অনেকেই নন মিউটেটেড ব্রিডারস (ওয়াইভস) দের সন্তান যাদেরকে ইম্মরটান জো বিভিন্ন যায়গা থেকে কিডন্যাপ করে নিজের স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করে এবং তাদেরকে নিজের সম্পদের মত যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করেন, "মানুষ" হিসেবে যাদের মূল্য তাঁর কাছে একেবারেই নেই। এদিকে ম্যাক্স (টম হার্ডি) ইম্মরটান জো এর একটি দলের হাতে ধরা পড়ে। জো তাকে তার একজন অসুস্থ ওয়ারবয় নাক্স(নিকোলাস হল্ট) এর ব্লাড ব্যাগ হিসেবে ব্যাবহারের আদেশ দেয়। কিন্তু এদিকে ইম্পেরেটর ফিউরিওসা(শার্ল‌িজ থেরন) জোর স্ত্রীদেরকে তাদের দুর্দশা থেকে মুক্তি দেবার জন্য জো এর সবচেয়ে শক্তিশালী ওয়াররিগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এটি জানতে পেরে জো তার সব ওয়ারবয়দেরকে নিয়ে ফিউরিওসাকে তাড়া করতে শুরু করে। এই তাড়া যে শেষমেশ কোথায় যায়- সেটা দেখাই আপনার দায়িত্ব।
আপনার দায়িত্ব আপনি কতটুকু ভাল করে করবেন সেটা আমি না জানলেও, এটা জানি যে এই সিনেমার সাথে জড়িত সবাই তাঁর দায়িত্ব ১০০% নয়, ১১০% করেছেন। এই সিনেমার নায়ক হলেন ডিরেক্টর জর্জ মিলার- ওহ মাই গড! what a direction and what a making! মুভির প্রথম শট থেকে শুরু করে শেষ শটটি পর্যন্ত প্রত্যেকটা সিন যেন এক একটা মাস্টারপিস। থ্রি সিক্সটি, ট্র্যাকিং, টপ ভিউ , ওয়াইড এঙ্গেল, মাস্টার শট, এস্ট্যাবলিশমেন্ট শট- প্রতিটা শট এতটাই দক্ষতার সাথে নেয়া হয়েছে যে আপনার মুখ অটোম্যাটিক হ্যাঁ হয়ে যেতে বাধ্য। জর্জ মুভিটির সিনেমাটোগ্রাফির জন্য অস্কার উইনার জন সিল কে অবসর থেকে ফেরত আনেন- এবং সেটার ফলাফল অসাধারণ! সিনেমার ৯৫% অংশ রাস্তায় ধারণ করা- এরপরেও ক্যারেকটার ডেভালপমেন্ট এ কোন ঘাটতি ছিল না। সংলাপ ছিল অনেক কম, কিন্তু কম সংলাপেও কীভাবে ক্যারেকটার এতটা দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় সেটা ম্যাড ম্যাক্স দেখলে বুঝবেন। এই স্টাইল কে “মিনিমালিস্ট” অ্যাপ্রোচ বলা হয় যেখানে ডায়লগ একেবারেই কম কিন্তু সিন ডিটেলস বেশি। জর্জ মিলার এক সাক্ষাৎকারে বলেন-আমি এই সিনেমায় এমন একটি পৃথিবীর (পোস্ট এপোক্যালিপ্টিক) কথা বলতে চেয়েছি যেখানে মানুষ খুব কম কথা বলে। আর আমি একটা বিশাল আকারের চেজ দেখাতে চেয়েছি যেখানে দর্শক রাস্তাতেই ক্যারেক্টারদের সাথে পরিচিত হতে পারবে।”
মুভিটির প্রধান চরিত্র হচ্ছে ফিউরিওসা। আর শার্ল‌িজ থেরন এই ক্যারেক্টারটিতে পুরো ফাটিয়ে দিয়েছেন! মেকাপ, ছোট চুল, চোখের দৃষ্টি- সবকিছুতে টেন অন টেন। নারী চরিত্রের প্রাধান্য বেশী এই সিনেমাতে এই কারনেই এই সিনেমাকে নারীবাদী সিনেমা বলা হচ্ছে এবং সেটা নিয়ে বেশ আলোচনা আর সমালোচনাও হচ্ছে। টম হার্ডির দিকে তাকানোর সুযোগ থাকবে না থেরন এর জন্য, যদিও টম ও বেশ ভাল করেছেন।( ডার্ক নাইট রাইজেজ এর পরে আবারো তাঁর মুখে মুখোশ! tongue emoticon ) মজার ব্যাপার হল, ম্যাড ম্যাক্স এর ১৯৭৯ সালের ভার্সনে মেল গিবসন যেই ধরনের জ্যাকেট পড়েছিলেন, টম ও ঠিক সেই ধরনের জ্যাকেট পড়েছেন। এছাড়া এই সিনেমার মত ফার্স্ট ম্যাড ম্যাক্স এর প্রধান ভিলেইন টো-কাটার ক্যারেক্টারটিও করেন Hugh Keays-Byrne এবং তিনি দুর্দান্ত কাজ করেছেন। যাকে নিয়ে কিছু না বললেই নয় সেটি হচ্ছে গিটারিস্ট এর ক্যারেকটার। গিটারিস্ট ইলেকট্রিক গিটারে স্ট্রামিং করলেই আগুনের স্ফুলিংগ বের হয় এর মাথা থেকে- এই দৃশ্য যতবার হলে বসে দেখেছি, ততবার রক্ত গরম হয়ে গেছে আনন্দে আর বিস্ময়ে! grin emoticon
গল্পের কিছু জায়গায় গাঁথুনি আরেকটু শক্ত হলে ভাল লাগত। এছাড়া বাকি সব দিক থেকে ম্যাড ম্যাক্স ইজ অ্যা ট্রিট টু ওয়াচ। প্রি প্রোডাকশন আর পোস্ট প্রোডাকশন এ যে কি পরিমান শ্রম গিয়েছে সেটা এক একটা গাড়ির ডিজাইন আর একশন দৃশ্যের সৌন্দর্য দেখলে বোঝা যায়। সিনেমার ভাল প্রিন্ট চলে এসেছে, কিন্তু আমি ডাউনলোড লিঙ্ক দিব না। কারণ এই সিনেমা হলে না দেখলে- সিরিয়াসলি "সিনেমাজীবন" বৃথা! পুরা সিনেমাটাই যেন একটা ট্রেলার- প্রতিটা সেকেন্ডে উত্তেজনা। ম্যাড ম্যাক্স ইজ অনলি অ্যাবাউট ম্যাডনেস। সিনেমার পোস্টারে একটি সংলাপ লেখা- what a lovely day! সিনেমা শেষে আপনার মুখ দিয়েও অটোম্যাটিকলি বের হয়ে যাবে- what a lovely CINEMA!











ডাউলোড লিংক এখানে
মূল পোস্টটি লিখেছেন Syed Nazmus Sakib